অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু দিয়েই গেছেন, কিছু নিয়ে যাননি। কারণ তাকে হত্যার পর এবং ১৫ আগস্টে যারা নিহত হয়েছেন, কাউকে কিন্তু তারা দাফন-কাফন দেয়নি। জানাজাও দেয়া হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার গরিব মায়েদের রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে যে রিলিফ দিতেন, সেই রিলিফের শাড়ি-কাপড়ের পাড় ছিড়ে, সেই কাপড় দিয়েই আমার বাবাকে দাফন দেয়া হয়েছিল। গ্রামের গরিব ও দরিদ্র মানুষকে তিনি যে কাপড় দিতে পারতেন, সেই কাপড়টা জড়িয়েই তিনি চলে গেছেন।’
সোমবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ (ভার্চুয়াল) করে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান জয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্টে হত্যাকাণ্ডের পর যেহেতু আমার বাবার লাশটা টুঙ্গিপাড়া নেয়া হয়েছিল সেখানে মাওলানা সাহেব এবং আশেপাশে যারা ছিল তারা জোর করেছিল বলে তাকে গোসলের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কাফনের কাপড় কেনার মতো কোনো দোকান খোলা ছিল না। কারফিউ দেয়া হয়েছিল। মানুষের কাছ থেকে তিনি কিছু নিয়ে যাননি, শুধু দিয়েই গেছেন। আমি এইটুকু বলব, কোনো আত্মত্যাগ বৃথা যায় না। তিনি যে স্বপ্ন দেখেছেন, এ দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের, ওইটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’
ছাত্রলীগকে তিনি বলেন, ‘ত্যাগের মধ্যে শান্তি, ভোগের মধ্যে নয়। মানুষকে কিছু দিতে পারলে শান্তি পাওয়া যায়। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চললে, দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারবে। ডিজিটালের মাধ্যমে দেশটা যেন এগিয়ে যায় সেটাই তোমাদের কাছে কামনা করি। আমরা যতই উন্নতি করি না কেন সাইন্স এবং টেকনোলজি না শিখলে আমরা উন্নতি কতে পারব না। এজন্য আমরা সাইন্স এবং টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। বিষয়ভিত্তিক অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় করে দেয়া হয়েছে। বেসরকারিভাবেও এসব বিষয়ের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন বিভিন্ন ভাষা শিখতে পারে সেজন্য নয়টা ভাষা দিয়ে অ্যাপ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। পৃথিবীর কোনো দেশে এত বই একসঙ্গে দিতে পারে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু আমরা তা দিয়ে যাচ্ছি কারণ, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। জাতি যখন শিক্ষিত হবে তখনই দেশ এগোবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমবার সরকারের আসার পর উদ্যোগ নিলাম শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য। তখন স্বাক্ষরতার হার ৪৫ ভাগ ছিল। অল্প সময়ের মধ্যে ৬৫ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ইউনেস্কো আমাদের পুরস্কার দিয়েছিল। দুঃখের বিষয়, ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি ক্ষমতায় আসল এবং স্বাক্ষরতার হার যথারীতি আরও কমিয়ে দিল। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে শিক্ষার নীতিমালা দিলাম। মাদরাসা শিক্ষায় যারা পড়াশোনা করে তারাও আমাদের ছেলে-মেয়ে, তারাও শিক্ষার দাবি করতে পারে। তাদেরও শিক্ষা আধুনিক করে দিচ্ছি। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টি মিডিয়া ক্লাস রুম বিশেষ করে আইটি শিক্ষাটা, ডিজিটাল সেক্টরটা, এই শিক্ষাটা আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এখানে কর্মসংস্থান বেশি হয়। আবার আমরা বিদেশি অর্থও উপার্জন করতে পারি।
তিনি বলেন, মাল্টি মিডিয়া বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমরা কাজ করতে পারি, সেটা আজ প্রমাণ হলো এই করোনাভাইরাসের সময়। যেখানে সবকিছু স্থবির হয়ে গিয়েছিল ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমেই আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি এবং উন্নয়নের কাজও আমরা করে যাচ্ছি। আজ আমরা ৯৭ ভাগ বিদ্যুৎ মাগরিবের সেই কাপড় জড়িয়েই চলে গেছেন বঙ্গবন্ধুনুষের ঘরে পৌঁছে দিতে পেরেছি। জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী আমরা ভালোভাবে পালন করতে পারিনি। কিন্তু প্রত্যেক গৃহহীন মানুষকে আমরা ঘর তৈরি করে দেব, প্রত্যেকের ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা আমরা করে দেব। কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না। সেইসঙ্গে আমরা বৃক্ষ রোপণের ঘোষণা দিয়েছি। ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানাই, তোমরা ব্যাপকভাবে বৃক্ষ রোপণ করে যাচ্ছ। এটা কিন্তু অব্যাহত রাখতে হবে। গাছ লাগানো এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে। আমাদের জমি আছে। আমরা উৎপাদন করে খাবারের ব্যবস্থা করব। খাবারের হাহাকার যেন না হয়, মানুষকে দ্বারস্থ যেন হতে না হয়। সেজন্য নিজেদের ব্যবস্থা আমাদের নিজেদেরই করে যেতে হবে। এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। যে যেটা পারে, সেটা করতে হবে।
‘ছাত্রলীগকে বলব, লেখাপড়া শিখতে হবে। এখন যেহেতু ক্লাস বন্ধ, অনলাইনে কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। সংসদ টেলিভিশন মাধ্যমিক ক্লাস নিচ্ছে। এখন সংসদ বেশি চলে না। সেখানে ক্লাসগুলো হচ্ছে। সেখানে তারা অনুশীলন করতে পারে। পড়াশোনা তারপরও চালিয়ে যেতে হবে। অবস্থা একটু ভালো হলে আমরা স্কুল-কলেজ খুলে দিতে পারব। এই মুহূর্তে প্রত্যেকের জীবন বাঁচানোটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যে যেখানেই যাক অনন্ত মুখে মাস্কটা পরে যেতে হবে। গ্রামেগঞ্জে যারা বসবাস করে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করবে। ছাত্রদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ পাড়া-প্রতিবেশী তাদের কথা শোনে।’
মতিহার বার্তা ডট কম: ৩১ আগষ্ট ২০২০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.